ঝালকাঠি ৬০ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎবিহীন, পানির তীব্র সংকট

 ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ঝালকাঠি জেলা শহরসহ চার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় ৬০ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে। এতে পৌর শহর ও আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা পানির তীব্র সংকটে পড়েছেন। বিদ্যুতের অভাবে সুপেয় পানির জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। জেলা শহরের বাসিন্দারা রান্নাবান্না ও গৃহস্থালির কাজে পৌর কর্তৃপক্ষের সরবরাহ করা পানির ওপর নির্ভরশীল। তবে বিদ্যুৎ না থাকায় প্রয়োজনীয় পানি পাচ্ছেন না বাসিন্দারা।


ঝালকাঠিতে দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় পৌর শহর ও আশপাশে এলাকার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করেন অনেকেই। আজ সকালে শীতলাখোলার মোড়ে।


আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রাজাপুর উপজেলা সদরের কিছু অংশে পল্লী বিদ্যুৎ বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়েছে। এ ছাড়া জেলার অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে।

এর আগে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে গত রোববার রাত ১১টার দিকে জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে বিপাকে পড়েন বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) ও পল্লী বিদ্যুতের প্রায় দেড় লাখ গ্রাহক। ঝালকাঠি পৌরসভা, কাঁঠালিয়া ও নলছিটি উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ওজোপাডিকো এবং বাকি এলাকা পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন।

 জেলার ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান বলেন, ঝালকাঠি-বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় ১১টি স্থানে ৩৩ হাজার কেভি লাইনের ওপর গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়েছে। এ ছাড়া রিমালের তাণ্ডবে বিভিন্ন এলাকায় গাছ ও গাছের ডালপালা ভেঙে বিদ্যুতের লাইন ও খুঁটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলোর মেরামতে কাজ চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আজ বিকেল গড়াতে পারে।

তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরবরাহ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে মাঠে নেমেছে ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। জেলার অনেক এলাকায় রাস্তাঘাট এখনো চলাচলের উপযোগী হয়নি। এ কারণে মেরামতের কাজে সময় লাগছে।

 দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ঝালকাঠি শহরের ডাক্তারপট্টি এলাকার গৃহবধূ ছবি আক্তার বলেন, ‘আমরা প্রায় চার দিন পর্যন্ত বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছি। রান্নাবান্না ও গৃহস্থালিকাজে পৌরসভার পানি সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল। তাই বিদ্যুৎ না থাকায় আমরা ভোগান্তিতে পড়েছি।’

পানির অভাবে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন বহুতল ভবনের বাসিন্দারা। শহরের আমতলা সড়কের মো. নসির উদ্দিন নামে এক আবাসিক ভবনের মালিক বলেন, ‘বিদ্যুৎ না থাকায় পানির পাম্প চালু করতে পারছি না। এতে ১০টি ভাড়াটে পরিবার বিপাকে পড়েছে।’

প্রয়োজনীয় পানির অভাবে শহরের সদর উপজেলা পরিষদের পুকুর ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের দিঘিতে গোসলসহ কাপড় ধোয়া ও থালা-বাসন ধোয়ার কাজ সারছেন অনেকেই। তাঁদের মধ্যে আবদুস সালাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘পাঁচ বছরেও পুকুরে গোসল করিনি। বিদ্যুৎ না থাকায় বাধ্য হয়ে পুকুরে গোসল করতে এসেছি। আবার পুকুর থেকে বালতিতে করে কিছু পানি বাসায়ও নিয়ে যাচ্ছি।’

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে ঝালকাঠিতে ছয় শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬ হাজার ১৯০ হেক্টর কৃষিজমির ফসল। বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে সাড়ে ৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ২ হাজার ৭০টি পুকুর ও ১৫৯টি মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলায় গাছ চাপা পড়ে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব কাটিয়ে ঝালকাঠিতে মানুষের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে। কাঠালিয়ার বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে লোকজন বাড়িতে ফিরে গেছে। আজ সকালে সুগন্ধা-বিষখালী নদীর জোয়ারের উচ্চতা কমেছে। এতে স্বস্তি ফিরেছে নলছিটি ও রাজাপুরের নদ-নদীর তীরবর্তী বাসিন্দাদের মধ্যে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন