Top News

জাবিতে ভবনের নির্মাণকাজে ছাত্রলীগের বাধা, চাঁদা দাবির অভিযোগ

 জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) চলমান অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় শিক্ষকদের জন্য নির্মাণাধীন ভবনের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে। সোমবার (৩ জুন) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ভবনের কয়েকজন শ্রমিক-কর্মচারীকে মারধর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।


জাবিতে ভবনের নির্মাণকাজে ছাত্রলীগের বাধা, চাঁদা দাবির অভিযোগ


প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীরা জানায়, সোমবার বিকাল চারটার দিকে জাহাঙ্গীরনগর স্কুল এন্ড কলেজ সংলগ্ন এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনে ১৫-২০ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী উপস্থিত হন। এ সময় তারা কার নির্দেশে ভবনের কাজ শুরু করেছে জানতে চেয়ে কর্মচারীদের এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় মারতে শুরু করে। পাশাপাশি শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলে, ‘এখানে কাজ করো বড় ভাইদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করা লাগে না? ভাইদের সঙ্গে কথা না বলা পর্যন্ত কাজ বন্ধ থাকবে।’ এক পর্যায়ে শ্রমিকরা ভয় পেয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। এছাড়া গেস্ট হাউস ও সুইপারদের জন্য নির্মাণাধীন ভবনের কাজও বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় অভিযুক্তদের কয়েকজনকে শনাক্ত করতে পারে ভুক্তভোগীরা। তারা হলেন- শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাব্বির হোসেন নাহিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান জয় ও অর্থ সম্পাদক তৌহিদুল আলম তাকিদ। তারা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী এক শ্রমিক জানান, ‘বিকেলে এখানে ৭-৮টি বাইক নিয়ে একদল ছাত্র এখানে আসে। তখন আমার কাছে ম্যানেজার সম্পর্কে জানতে চায়। ম্যানেজারকে দেখিয়ে দিলে তারা তাকে ডেকে নিয়ে যায় এবং দফায় দফায় চারজনকে মারধর করে। আমরা জিজ্ঞেস করতে গেলে তারা বলে ‘তোদের এমডি কে কল দে! সে কি হয়ে গেছে যে আমাদের এখানে এসে তার সঙ্গে দেখা করতে হবে? সে আমাদের কোন খোঁজ খবর রাখে না। সে জানেনা যে জাহাঙ্গীরনগরে আসলে আমাদের সঙ্গে কথা বলে কাজ করতে হয়। এমডিকে বলিস যে ভাইয়েরা আসছে। আমাদের সঙ্গে যেন যোগাযোগ রাখে। আমাদের পরিচয় জানার দরকার নাই।’

এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিবুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘আমি কাজ বন্ধ করার খবর পেয়েছি। এরপর ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল ভাইকে বিষয়টা জানিয়েছি। কেন আমার কাজ বন্ধ করা হলো জানতে চেয়েছি? তিনি তখন বলেছেন কারা কাজ বন্ধ করেছেন এ বিষয়ে তিনি খোঁজ নিবেন।’

চাঁদা দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানে তো আর কাজ করতে আসেনি। কেন এসেছে তা আপনারা বুঝতে পারেন। তবে কাল থেকে কাজ চলবে বলে আশা করি। কাজ বন্ধ রাখার কোন কারণ দেখছি না।’ এদিকে নির্মাণকাজে বাধা দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সাব্বির হোসেন নাহিদ বলেন, ‘আমার বিষয়ে যে অভিযোগ করল সে কি আমাকে চিনে? কীভাবে সে আমাকে চিহ্নিত করল? আর আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না।’ অপর অভিযুক্ত মেহেদী হাসান জয়ের সাথে মুঠোফোন যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

আরেক অভিযুক্ত তৌহিদুল আলম তাকিদ বলেন, ‘আমি বিকাল তিনটার দিকে বিশ মাইল গিয়েছিলাম বাইকের তেল আনতে। পরে চারটা সাড়ে চারটার দিকে সেন্ট্রাল ফিল্ডে ছিলাম কিছুক্ষণ। এরপর হলে চলে আসি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন।’

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে এ বিষয়ে জানেন না বলে দাবি করেন। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এমডি বিষয়টি তাকে অবহিত করেছেন বলে জানালে সোহেল বলেন, ‘আমি খোঁজ নিয়েছি। তবে কারা কাজ বন্ধ করেছে তা জানতে পারিনি। আর যাদের নাম বলেছে তারা যায়নি। কোনো ছাত্রলীগ কর্মী এমন কাজ কেউ করলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এ বিষয়ে চলমান অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের একটি দল আমাদের চলমান কাজের তিনটি এরিয়ায় গিয়ে কর্মরত ব্যক্তিদের গালাগালি ও মারধর করেছে। তারা বলেছে প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলতে চায়। এভাবে হুটহাট করে এসে কর্মচারীদের মারধর করা ন্যাক্কারজনক।’

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন