গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী অশান্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও প্রশাসনিক পুনর্গঠনের মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে টিকে আছে, তার পেছনে একমাত্র বড় অবলম্বন হিসেবে কাজ করছে প্রবাসী আয়—রেমিট্যান্স। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এক বক্তব্যে পরিষ্কারভাবে বলেছেন, “বর্তমান সংকটময় সময়ে দেশের অর্থনীতিকে কার্যত বাঁচিয়ে রেখেছে প্রবাসীদের পাঠানো মুদ্রা প্রেরণ।”
তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ, শিল্প উৎপাদন, রপ্তানি ও কর আদায়ে ধীরগতি দেখা গেলেও ব্যাংকিং খাতের তারল্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং ভোক্তা বাজারে ডলার সরবরাহ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে রেমিট্যান্সই এখন প্রধান চালিকাশক্তি।
![]() |
| ‘অর্থনীতির অক্সিজেন এখন প্রবাসী আয়’ — প্রধান উপদেষ্টার স্বীকারোক্তি |
রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, অভ্যুত্থানের পরপরই মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবণতা বেড়েছে। প্রধান উপদেষ্টা জানান—
গত তিন মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ গড়ে ১২ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে
ব্যাংকের মাধ্যমে হুন্ডি প্রতিরোধে বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে
বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠালে ২.৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে
তিনি বলেন, “প্রবাসীদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। তারা কষ্টার্জিত অর্থ পাঠিয়ে শুধু নিজেদের পরিবার নয়, পুরো দেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখছেন।”
অর্থনীতিবিদদের সতর্কতা: শুধুমাত্র রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভরতা ঝুঁকিপূর্ণ
অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেমিট্যান্স অবশ্যই আশীর্বাদ, তবে এটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়। যদি দ্রুত শিল্পখাত, রপ্তানি সক্ষমতা ও বৈদেশিক বিনিয়োগ পুনরুদ্ধারে পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে অর্থনীতি একধরনের কৃত্রিম স্থিতিশীলতার মধ্যে থেকে যাবে।
একজন প্রবীণ অর্থনীতিবিদের ভাষায়—
“রেমিট্যান্স আমাদের অক্সিজেন সিলিন্ডার; কিন্তু স্থায়ী সুস্থতার জন্য প্রয়োজন নিজের ফুসফুসকে সচল করা।”
প্রবাসীদের জন্য আরও সুবিধার ঘোষণা
প্রধান উপদেষ্টা জানান, প্রবাসী আয় আরও বাড়াতে সরকার কিছু অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে—
আন্তর্জাতিক মানের ডিজিটাল রেমিট্যান্স অ্যাপ চালু
প্রবাসীদের জন্য স্বয়ংক্রিয় সঞ্চয় স্কিম ও বিনিয়োগ বন্ড
দেশে ফিরে উদ্যোক্তা হলে বিশেষ ঋণ সুবিধা
জনগণের প্রত্যাশা: রেমিট্যান্সের পাশাপাশি কর্মসংস্থান ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ
দেশের সাধারণ মানুষ মনে করছেন, রেমিট্যান্স অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখলেও জীবনযাত্রার খরচ কমছে না। খাদ্যদ্রব্য, ভাড়া ও জ্বালানির দাম এখনও অনেকের নাগালের বাইরে। তাই তারা চান—রেমিট্যান্সের পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কর্মসংস্থানের বাস্তব উদ্যোগ দেখতে।
সবশেষে প্রধান উপদেষ্টা বলেন,
“এটা শুধু অর্থনৈতিক সংকট নয়, একটি সম্মিলিত টিকে থাকার লড়াই। সরকার একা নয়—প্রবাসী থেকে স্থানীয় উদ্যোক্তা, কৃষক থেকে দিনমজুর—সবাই মিলে আমাদের এই দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।”

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন