কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকেই সরকার পতন

 বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফায় অবশেষে সরকারের পতন ঘটেছে। ২০১৮ সালের পর চলতি বছরে দ্বিতীয় দফার এই আন্দোলনে (সোমবার পর্যন্ত) শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষসহ অন্তত ৩০০ জন নিরস্ত্র মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। আন্দোলনে সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবির মুখে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন শেখ হাসিনা। এরপর দেশজুড়ে বিজয় উল্লাস শুরু হয়। ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে সর্বসাধারণ ঘর থেকে রাস্তায় নেমে পড়ে। বিজয় উল্লাসের ধ্বনিতে কম্পিত হয় পুরো দেশ।

এদিকে কোটাপ্রথা নিয়ে এবারের আন্দোলন ছিল শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় দফা আন্দোলন। মূল আন্দোলন শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে আন্দোলন থেমে গিয়েছিল। পরে আদালতের এক রায়ের পরে দ্বিতীয় দফা টানা আন্দোলন শুরু হয়েছিল চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে। অহিংস এই আন্দোলন সহিংস হয় ১৫ জুলাই থেকে। এ অবস্থায় সরকার সব ধরনের ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয় ১৭ জুলাই। ফলে বন্ধ থাকে অনলাইন সংবাদমাধ্যম। এরপর তা ক্রমান্বয়ে সহিংস রূপ নেয়। এক আগস্ট জামাত-শিবিরের রাজনীতি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে সরকার পদত্যাগের একদফা ঘোষণা দেওয়া হয়। ৪ আগস্ট ঘোষণা করা হয় লং-মার্চের। সবশেষ ৫ আগস্ট সরকারপ্রধান পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করেন।

দ্বিতীয় দফা আন্দোলন পর্যালোচনা করে দেখা যায়-চলতি বছরের ৫ জুন : সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় প্রদান। এই রায়ের ফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে নিয়োগ দেওয়ায় আর বাধা থাকল না। আলোচনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহ নিম্নে তুলে ধরা হলো :


৬ জুন : সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা (মুক্তিযোদ্ধা কোটা) পুনর্বহালে আদালতের দেওয়া রায় বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়। ‘সরকারি চাকরিতে ২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিল করে কোটাপদ্ধতি পুনর্বহাল-সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে এবং চাকরিতে মেধাভিত্তিক নিয়োগ বহাল রাখার দাবিতে’ এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ’-এর ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী অংশ নেন।


৯ জুন : সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রতিবাদে আবারও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি মানতে সরকারকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। এই সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে সর্বাত্মক আন্দোলনের ঘোষণা দেন তারা। একই দাবিতে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেন।


১ জুলাই : কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ছাত্রসমাবেশ ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশে ৪ জুলাইয়ের মধ্যে দাবির বিষয়ে চূড়ান্ত সুরাহার আহ্বান জানানো হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে তিন দিনের কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।


২ জুলাই : আন্দোলনকারীরা বেলা পৌনে ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিল করে নীলক্ষেত, সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও বাটা সিগন্যাল মোড় ঘুরে শাহবাগে গিয়ে থামে। সেখানে তারা ১ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। একই দিন বিকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী ঢাকা-আরিচা ২০ মিনিটের জন্য অবরোধ করেন।


৩ জুলাই : এদিন আন্দোলনকারীরা ঢাকার শাহবাগ মোড় দেড় ঘণ্টার মতো অবরোধ করে রাখেন। একই দাবিতে আরও ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও অবরোধ করেন।


৪ জুলাই : সরকারি চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণার বিষয়ে হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগে স্থগিত করেনি। পরের সপ্তাহে এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে বলে ওই দিন অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে জানানো হয়। এদিন শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন মহাসড়ক অবরোধ করেন। আর ঢাকায় শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখেন ৫ ঘণ্টা। সমাবেশ থেকে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়।


৫ জুলাই : ছুটির দিন শুক্রবারও বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। চট্টগ্রাম, খুলনা ও গোপালগঞ্জে সড়ক অবরোধ করা হয়।


৬ জুলাই : দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আগের দিনের মতোই বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় আন্দোলনকারীরা সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, ছাত্র ধর্মঘট এবং সারা দেশে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধের ডাক দেন। এর নাম দেওয়া হয় ‘বাংলা ব্লকেড’।


৭ জুলাই : বাংলা ব্লকেডে স্থবির রাজধানী। অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা।


৮ জুলাই : ঢাকার ১১টি স্থানে অবরোধ, ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ, তিনটি স্থানে রেলপথ অবরোধ এবং ছয়টি মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। কোটাবৈষম্যের বিরুদ্ধে ও স্থায়ী সমাধানের দাবিতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামে ৬৫ সদস্যের সমন্বয়ক টিম গঠন করা হয়।


৯ জুলাই : হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থী আবেদন করে।


১১ জুলাই : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শন করছেন।


১২ জুলাই : কোটা সংস্কারের দাবিতে শুক্রবার ছুটির দিনেও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।


১৩ জুলাই : সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়। পরের দিন ১৪ জুলাই গণপদযাত্রা করে রাষ্ট্রপতি বরাবর এ স্মারকলিপি দেবেন আন্দোলনকারীরা।


১৪ জুলাই : গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন, ‘কোটা বিষয়ে আমার কিছু করার নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘মামলার পর আদালত যে রায় দেন, এতে নির্বাহী বিভাগের কিছু করার নেই। আদালতেই সমাধান করতে হবে।’ শেখ হাসিনা আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে?’


একই দিনে পদযাত্রা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়ে আন্দোলনকারীরা জাতীয় সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে সরকারি চাকরির সব গ্রেডের কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন।


১৫ জুলাই : বেলা ২টায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দুপুর ২টায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’ স্লোগানের জবাব ছাত্রলীগ দেবে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বেলা ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দফায় দফায় ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় আন্দোলনকারীদের মারধর করা হয়। গুলি করতেও দেখা যায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা হয়।


১৬ জুলাই : সারা দেশে দিনভর ব্যাপক বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ হয়। আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সরকার সমর্থকরা। এতে নিহতের ঘটনা ঘটে। রংপুরে আন্দোলনকারী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের বুলেটে নিহত হন। বিকালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আন্দোলন যাবে, আন্দোলন আসবে। কিন্তু ছাত্রলীগ থাকবে’।


১৭ জুলাই : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিতাড়ন করে ‘রাজনীতিমুক্ত’ ঘোষণা দেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্র বিক্ষোভ, সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, গায়েবানা জানাজা, কফিন মিছিল এবং দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পালটাপালটি ধাওয়ার ঘটনা। এদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, আমাদের ছাত্রসমাজ উচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচারই পাবে, তাদের হতাশ হতে হবে না।’ এদিন রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়।


১৮ জুলাই : দেশব্যাপী প্রতিরোধ, সহিংসতা, সংঘর্ষ ও গুলি করা হয়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারা দেশ ছিল প্রায় অচল। রাজধানী ছাড়াও দেশের ৪৭টি জেলায় দিনভর বিক্ষোভ, অবরোধ, পালটাপালটি ধাওয়া, পুলিশের হামলা-গুলি ও সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় নিহত ও আহত হয়েছেন অনেকেই। ফলে সারা দেশে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। এদিন রাতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়।


১৯ জুলাই : কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ বা সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি ঘিরে রাজধানী ঢাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর, গুলি, অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীরা জানান, ৯ দফা দাবি না মানা পর্যন্ত চলবে ‘শাটডাউন’।


২০ জুলাই : শনিবার দেশজুড়ে কারফিউ, সেনা মোতায়েন করা হয়। সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কারফিউ চলবে। এদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে।


২১ জুলাই : সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পুনর্বহাল-সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় সামগ্রিকভাবে বাতিল (রদ ও রহিত) করে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় প্রদান। রায়ে বলা হয়, কোটাপ্রথা হিসাবে মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ; ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। একই দিন চার দফা দাবি পূরণের জন্য বৈষম্যবারোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন।


২২ জুলাই : সোমবার কোটাপ্রথা সংস্কার করে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তৈরি করা প্রজ্ঞাপনে অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী। রাতে সীমিত আকারে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু হয়।


২৪ জুলাই : বুধবার ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কোটা আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদের খোঁজ পাওয়া যায়। নিখোঁজ থাকার পাঁচ দিন পর আসিফ ও বাকেরকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে যাওয়া হয়েছে বলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দুজনই জানায়। আর রিফাত আত্মগোপনে আছে বলে জানানো হয়।


২৫ জুলাই : বৃহস্পতিবার চিকিৎসাধীন আরও তিনজনের মৃত্যু হয়। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় ছুটির দুদিন-শুক্র ও শনিবার কারফিউ শিথিল থাকবে ৯ ঘণ্টা।


২৬ জুলাই : এলাকা ভাগ করে চলে ‘ব্লক রেইড’। চলে সারা দেশে অভিযান। সারা দেশে অন্তত ৫৫৫টি মামলা। গ্রেফতারের সংখ্যা ছয় হাজার ২৬৪। চট্টগ্রামে ৩০ শিক্ষার্থী গ্রেফতারের খবর পাওয়া যায়। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আরও তিনজনের মৃত্যু হয়। নাহিদ ইসলামসহ কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ককে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে নিজেদের হেফাজতে নেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। অপর দুই সমন্বয়ক হলেন আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদার।


২৭ জুলাই : কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরও দুই সমন্বয়ককে হেফাজতে নেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তারা হলেন সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন আহত ব্যক্তিদের দেখতে যান। গুরুতর আহত চিকিৎসাধীন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। হাসপাতালে আহতদের দেখার পর সেতু ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও টোল প্লাজা দেখেন প্রধানমন্ত্রী।


২৮ জুলাই : রোববার কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুমকে হেফাজতে নেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। ভোরে রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তাকে উঠিয়ে নেওয়া হয়। ডিবির হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয়জন সমন্বয়ক এক ভিডিও বার্তায় সব কর্মসূচি প্রত্যাহারের কথা বলেছেন। ডিবি কার্যালয়ে ধারণ করা একটি ভিডিও বার্তা রাত ৯টার দিকে গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। এক ব্রিফিংয়ে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ডিবির হেফাজতে নেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের গ্রেফতার করা হয়নি। রাত ৯টার দিকে নাহিদ ইসলামসহ ছয় সমন্বয়কের ওই ভিডিও বার্তা আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পৃথক বার্তায় এসব কথা বলেন এই আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক মাহিন সরকার, আব্দুল কাদের ও আব্দুল হান্নান মাসুদ। মাহিন সরকার বলেছেন, ‘অস্ত্রের মুখে ডিবি অফিসে ছয় সমন্বয়কের ভিডিও বিবৃতি নেওয়া হয়েছে। এদিন মোবাইল ইন্টারনেট চালু হয়।


৩০ জুলাই : মঙ্গলবার হত্যার বিচার চেয়ে মুখে লাল কাপড় বেঁধে মিছিল হয়। জাতিসংঘ মহাসচিবের বিবৃতিতে স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানানো হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের প্রোফাইল লাল রঙের ফ্রেমে রাঙায় অনেকেই। রাঙিয়েছেন অনেকে। এসব ব্যক্তির মধ্যে শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিক, লেখক, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ আছেন। অন্যদিকে সরকার-সমর্থকদের অনেকে ফেসবুক প্রোফাইলে কালো রঙের ফ্রেম জুড়েছেন। এদিন ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা আসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে।


৩১ জুলাই : মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচির পর বৃহস্পতিবারের জন্য নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশ। এদিনের কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোস’।


১ আগস্ট : গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে ছেড়ে দেওয়া হয়। এদিন জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।


৩ আগস্ট : কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবি আদায়ে ঘোষণা করা হয়।


৪ আগস্ট : ঢাকায় লং-মার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।


৫ আগস্ট : শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জনসাধারণ রাস্তায় নেমে পড়েন। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ৫ আগস্ট সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন শেখ হাসিনা। দুপুরে জাতির উদ্দেশে ভাষণে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এ কথা জানান।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন