ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ক্যানটিনের খাবারের মান নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ দিন দিন বাড়ছে। সম্প্রতি এক শিক্ষার্থী রাতের খাবার খাওয়ার সময় প্লেটের ভাত-তরকারির ভেতরে আস্ত কাঁকড়ার মতো একটি প্রাণী পান। এ দৃশ্য দেখে তিনি ভীষণ ঘৃণা অনুভব করেন এবং ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেন। মুহূর্তের মধ্যেই ঘটনাটি ভাইরাল হয়ে যায় এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ও মাস্টারদা সূর্য সেন হলে এমন ঘটনা ঘটেছে। কারও খাবারে কাঁকড়া, কারও খাবারে তেলাপোকা কিংবা মাছি পাওয়া গেছে। সম্প্রতি শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের এক্সটেনশন ভবনের হাবিব ক্যানটিনে রাতের খাবারের ভেতরে তেলাপোকা পাওয়া গেলে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। প্রভোস্ট ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পান এবং ক্যানটিন মালিককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
কয়েকজন শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন—
“আমরা প্রতিদিন যে খাবার খাই, সেখানে পোকামাকড় বা তেলাপোকা পাওয়া মানে সরাসরি আমাদের স্বাস্থ্যের সঙ্গে ছিনিমিনি খেলা।”
“বাসি ভাত, নষ্ট সবজি আর নিম্নমানের তেল দিয়ে রান্না করা খাবার খেতে হচ্ছে বাধ্য হয়ে।”
“অভিযোগ জানালেও কয়েকদিন পর আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায় সব।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তেলাপোকা পাওয়ার ঘটনায় ক্যানটিন মালিককে জরিমানা করা তারই প্রমাণ। প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিটি হলে খাবারের মান উন্নত করতে কড়া মনিটরিং চালু করা হবে এবং যারা নিয়ম ভাঙবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রান্নাঘরে সঠিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব
নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার
খাবার সংরক্ষণে অব্যবস্থা
ক্যানটিন তদারকিতে ঘাটতি
এ ধরনের খাবার খেয়ে শিক্ষার্থীরা ডায়রিয়া, হজমের সমস্যা ও নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। তাছাড়া মানহীন খাবার শিক্ষার্থীদের মনোবল ও পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ কমিয়ে দিচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের কাছে কয়েকটি দাবি তুলেছেন—
প্রতিটি হলে ক্যানটিনের খাবারের মান নিশ্চিত করতে স্থায়ী তদারকি কমিটি গঠন।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্যানিটেশন টিমের পরিদর্শন।
ক্যানটিন কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সনদ বাধ্যতামূলক করা।
খাবারের উপকরণ কেনার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করা।
শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি যুক্ত করে ক্যানটিন পরিচালনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব বহন করছে। তাদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করা শুধু প্রশাসনের দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতাও। কিন্তু বারবার পোকা, তেলাপোকা বা কাঁকড়া খাবারে পাওয়া প্রমাণ করে যে এখনো গুরুতর অব্যবস্থাপনা বিদ্যমান। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ আরও বাড়বে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন